বাংলা বিজ্ঞান প্রবন্ধের পাঠকদের জন্যে...
আজকের দিনটার একটা বিশেষ ইতিবৃত্ত আছে। সপ্তাহখানেক হল সূর্যশেখর নিউইয়র্ক থেকেফিরেছেন। সেখানকার বিখ্যাত কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তাঁর নামে বিশেষ আমন্ত্রন পত্র এসেছিল। ইউনিভার্সিটি সংস্থা “মলিকিউলার ইভোল্যুশন কনফারেন্স” এর আয়োজন করেছিল। পর পর তিন দিন সেখানে তাঁর লেকচার সেশান চলেছে। আমেরিকায় থাকাকালীন তিনি সোমেশের ফোনটা পান। সোমেশ তাঁর প্রিয় ছাত্র। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে সে রেকর্ড মার্কস পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করে। প্রোফেসর সেনগুপ্ত সেই সময়ে তাদের বায়োকেমিস্ট্রি পড়াতেন। বর্তমানে সোমেশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির ফ্যাকাল্টি। সোমেশই তাঁকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছিল যে, নিউইয়র্কের লেকচারের একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তিনি যদি তাদের ইন্টারভিউ দিতে রাজি হন। তাঁর ইন্টারভিউ ছাত্রদের দেখান হবে। সোমেশের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেননি। ইতিমধ্যেই বহু ছাত্র তাঁকে ফোন করেছে। সবাই তাঁর বিজ্ঞানের গল্প শুনতে চায়। আর তা তিনি শোনাতেও ভালোবাসেন। এরপর...
এই ক’দিন নভেল করোনা ভাইরাস প্যান্ডেমিকে দেশজুড়ে লকডাউনের সময় নিশ্চয়ই খেয়াল করেছিলেন পরিবেশ কতোটা নির্মল হয়ে গেছে? আমরা সকালে ঝকঝকে নীল আকাশ দেখছি, রাতে ধোঁয়াশাশূন্য মেঘমুক্ত আকাশে দু’চোখ ভরে দেখছি তারার মেলা। কিছুটা হলেও সুস্থিরভাবে নিতে পারছি নিঃশ্বাস। কিন্তু এ যেন ক্ষণস্থায়ী সুখ, কিছুটা যেন স্বপ্নের মতো! নগরজীবন আবার আগের মতো ব্যস্ত হবে, আর তার সাথে হয়তো শেষ হবে এই আপাত স্বস্তির দিনগুলো। ভারতের মহানগরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা আকাশছোঁয়া। তবে শুধুমাত্র ভারত নয়, বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও বায়ুদূষণের সামগ্রিক ছবিটা প্রায় একই রকম। বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাবে মানুষের দেহের প্রভূত ক্ষতিসাধন হয়- তা আমাদের অজানা নয়। কিন্তু বায়ুদূষণে মানসিক স্বাস্থ্যেরও যে যথেষ্ট ক্ষতি হয়, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। আর কারা সবচেয়ে বেশি এই ক্ষতির শিকার হয় জানেন? ছোট শিশুরা। হ্যাঁ, সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই চিন্তাজনক তথ্য উঠে এসেছে। এরপর...
পরাধীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষ ছিল নিদারুন দারিদ্র, অশিক্ষা এবং কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন। নারীশিক্ষার কোনো সুযোগ ছিলো না। পর্দানসীন নারীর জীবন কাটতো অন্দরমহলে, সংসারের কাজে, সন্তান-প্রতিপালনে। শিক্ষা ও পেশাদারী কাজে ছিল শুধুমাত্র পুরুষদের অধিকার। নারীর জীবন ঘেরা ছিল পুরুষশাসিত সমাজতন্ত্রের কঠিন আবর্তে। বাল্যবিবাহ, সতীদাহের মতো সামাজিক অভিশাপের শিকার ছিল নারী। সেই তমসাচ্ছন্ন সময়ে সামান্য কয়েকজন নারী অসীম সাহসে সমস্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক বাধাকে উপেক্ষা করে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হাতে এগিয়ে ছিলেন শিক্ষা ও জ্ঞান অন্নেষণ এর পথে। তাঁদের মধ্যে অগ্রগন্যা ছিলেন বাংলার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। এরপর...
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের কর্মজীবনের প্রায় সবটাই মানবকল্যানের কাজে উৎসর্গীকৃত। বিজ্ঞানে যাঁদের অসামান্য কৃতিত্ব ও অবদানের জন্য আজকের পৃথিবীর মানুষ ও ভবিষ্যৎপ্রজন্ম চিরকাল ঋণী থাকবে। কিন্তু তাঁদের কাজের যোগ্য সম্মান ও স্বীকৃতি কোনোদিনই তারা হয়তো পান না এমনকি তাঁদের নাম পর্যন্ত একালের মানুষ জানেন না। এমনি এক বিজ্ঞানী ছিলেন ডঃ এল্লাপ্রাগাদা সুব্বারাও। শুনলে আশ্চর্য হতে হয়, যে সমস্ত আবিষ্কার তিনি সারাজীবনে করে গেছেন তা চিকিৎসাবিজ্ঞানের জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এবং অবিস্মরণীয়। কিন্তু সেই মৃদুভাষী, ধীর মানুষটি চিরকাল থেকে গেছেন প্রচার ও স্বীকৃতির আড়ালে। এরপর...
তাঁর বাড়িতে ঢুকলেই দেখা যেত সার সার খাঁচা। সিঁড়ির পাশটা ভরে উঠত নানা জাতের পাখির কিচকিচ আওয়াজে। ঘরে ঢুকলেও হয়তো রবীন্দ্র রচনাবলীর পাশে থাকত একটা সুন্দর ময়না। পাখি, আর রবীন্দ্রনাথ— এই দুই নিয়েই তো বেঁচেছিলেন তিনি। অজয় হোম। বাংলার এখনকার প্রজন্ম সেরকম পরিচিত নয় এই নামের সঙ্গে। কিন্তু বাংলায় পাখি ও প্রকৃতিচর্চায় তিনিই অগ্রগণ্য। বেশ কিছু বছর হল চলে গেছে তাঁর জন্ম শতবর্ষ। তবুও বিস্তৃতির অতলে পড়ে রয়েছেন তিনি। এরপর...
জর্জ বার্নাড শ তাঁর বিখ্যাত "দ্য ডক্টর'স ডিলেমা" নাটকে একটি আশ্চর্য উক্তি লিখেছিলেন। নাটকে স্যার ব্লুমফিল্ড বোনিংটন নামে এক চিকিৎসক তাঁর কাউন্সেলিং চেম্বারে বসে বলে উঠলেন- "ওষুধ কেবলমাত্র উপসর্গগুলোকে কমিয়ে দেয়, তা কখনো রোগ নির্মূল করতে পারে না। সমস্ত রোগের সত্যিকারের চিকিৎসা হল প্রাকৃতিক চিকিৎসা।" ১৯০৬ সালে লন্ডনের রয়্যাল কোর্ট থিয়েটারে মঞ্চস্থ হওয়া এই নাটকের উক্তিটি একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ক্যানসার গবেষণার পাথেয় হয়ে থাকবে। কিন্তু কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আমাদের আরও একটি শব্দের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে, তা হল ‘ক্যানসার ইমিউনোথেরাপি’। কেমন যেন ধাঁধার মতো লাগছে, তাই না? এরপর...
সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের অবদান আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনস্বীকার্য। বহু জীবাণুবাহিত মারাত্মক রোগসংক্রমণে এমনকি যে রোগগুলি সঙ্ক্রামক নয়, যেমন ক্যান্সার, তারও চিকিৎসায় বর্তমানে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ভ্যাকসিন বা টিকার ব্যবহার। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই ঐতিহাসিক সত্য যে প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও তার ব্যবহার আমাদের ভারতবর্ষেই শুরু হয়েছিল! প্রায় ৩০০০ বছর আগে উত্তর ও পূর্ব ভারতে ভ্যাকসিনেশান বা টিকাকরণের অনুরূপ একটি প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। পঞ্চম এবং খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ভারতে হিন্দু ও বৌদ্ধ শাস্ত্র পঠনপাঠনের জন্যে স্থাপিত পুষ্পগিরি, নালন্দা, তক্ষশীলা এবং বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকাকরণের বিষয়ে শিক্ষাদান করা হতো। এরপর...
ডেঙ্গু, মাম্পস, রুবেলা, চিকেনপক্স, হেপাটাইটিস-সি, এইডস ভাইরাস, এদের সংক্রমণে অস্থিমজ্জা (bone marrow) থেকে রক্তে অণুচক্রিকা (platelets) সৃষ্টি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যেতে পারে। এছাড়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা প্যানসাইটোপেনিয়া রোগে, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা জাতীয় ক্যান্সারে এমনকি ভিটামিন বি-12 ও ফোলিক অ্যাসিড-এর স্বল্পতায় অস্থিমজ্জা থেকে খুব কম পরিমাণে অণুচক্রিকা তৈরী হয়। কিন্তু অণুচক্রিকা যে শুধু অস্থিমজ্জাতেই তৈরী হয়না, সম্প্রতি তার পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া গেছে একটি গবেষণায়। এরপর...
Post a Comment